Tasnimul Hasan:
সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুজ : সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
সাইফ আদ-দ্বীন কুতুজ (আরবি: سيف الدين قطز) বা সাইফুদ্দিন কুতুজ ছিলেন মিশরের মামলুক সুলতান। সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ এর পুরো নাম আল-মালেক-মুজাফফর সাইফ আদ-দীন কুতুজ। সাইফুদ্দিন কুতুজ, মাহমুদ বিন মামদুদ নামেও অনেক বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ মামলুক সুলতান। ইতিহাসের আলোচিত প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্বের অধিকারী সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ মাত্র এক বছর মিশরের সিংহান অলংকৃত করেছিলেন। সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন তার বীরত্ব আর সাহসীকতার মাধ্যমে। অপ্রতিরোধ্য মোঙ্গল বাহিনীকে তিনি আইন-জালুতের প্রান্তরে শোচনীয়ভাবে ধ্বংস করে ইসলামি বিশ্বকে এক মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেন। আইন-জালুতের সাথে তাকেও স্বরণ কার হয়।
তিনি আইন-জালুতের প্রান্তরে এক নতুন উপাখ্যান সৃষ্টি করেছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে তিনি যদি না থাকতেন তাহলে আজ মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস অন্যভাবে লিখা হত। মাত্র এক বছর শাসন করে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন।
* জন্ম ও শৈশব
সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুজ ১২২১ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর
খাওয়ারিজম সম্রাজ্যের রাজ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন
সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ এর মূল নাম মাহমুদ বিন মামদুদ। তিনি ছিলেন খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যের সুলতান জালালুদ্দিন খাওয়ারেজম শাহের ভাগ্নে। খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
সে সময় পৃথিবীতে উত্থান ঘটে দুর্ধর্ষ মঙ্গোল জাতির।
তারা মুসলিম প্রাচ্যের শহর-নগরগুলোকে একের পর এক পদানত করতে থাকে। রাস্তাঘাটে চলে তাদের তাণ্ডব। তারা পুরুষদেরকে হত্যা করে নারী ও শিশুদেরকে বন্দি করে নিয়ে যেত এবং পরবর্তীতে কোনো দাস বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিত।
এমনই এক সময় চেঙ্গিস খানের পুত্র জোচি ও তার দক্ষ সেনাপতি সুবুতাইকে খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যে প্রেরণ করে। তারা হামলা চালিয়ে তা দখল করে নেয়।
সুলতান জালালুদ্দিন তাঁর রাজ্য, পরিবার বা আত্মীয়স্বজন কাউকেই তাতারদের থেকে রক্ষা করতে পারেননি। তাদের অনেকেই মারা যায়, অনেকেই বন্দি হয়। সেসব বন্দিদের মধ্য থেকে একটি শিশু ছিল মাহমুদ বিন মামদুদ।
তাতাররা মাহমুদের নাম দেয় 'কুতুজ' এবং এ নামেই দামেশকের দাস বাজারে তাঁকে বিক্রি করে দেয়। হাত বদল হতে হতে দামেশক থেকে কুতুজ পৌঁছে যান মিশরে।
মিশরে তখন সুলতান আলমালিকুস সালিহ নাজমুদ্দিন আইয়ুবের শাসন চলছিল। তাঁরই এক মামলুক (দাস) আমির ছিলেন ইজ্জুদ্দিন আইবেক। ইজ্জুদ্দিন আইবেক হন কুতুজের নতুন মনিব। এখানে মনিবের তত্ত্বাবধানে থেকে কুতুজ বেড়ে ওঠতে থাকেন। শিক্ষা-দীক্ষায়, ইলমে-আমলে তিনি হয়ে ওঠতে থাকেন একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সবার থেকে আলাদা। এক অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।এখান থেকেই শুরু হয় হয় তার সংগ্রাম
নিজের পরিবারের কথা ভুলে, পাহাড়সম কষ্ট মাটিচাপা দিয়ে মন দেয় আপন জীবন গড়ার লক্ষ্যে।
যে সময়টাতে তাতাররা খাওয়ারেজম সাম্রাজ্যে হামলা চালিয়ে কুতুজকে বন্দি করে নিয়ে যায়, এর কাছাকাছি সময়েই তারা কিপচাক এলাকায় হামলা চালায় এবং সেখান থেকে রুকনুদ্দিন বাইবার্সকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তারা বাইবার্সকেও দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়।
কাকতালীয়ভাবে বাইবার্সও হাত বদল হতে হতে মিশরে গিয়ে পৌঁছেন। মিশরের সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবেরই আরেক মামলুক আমির ছিলেন ফারিসুদ্দিন আকতাই। বাইবার্সের নতুন মনিব হন আকতাই।
মামলুকরা সরাসরি সুলতানের তত্ত্বাবধানে দীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। সুলতান তাদের জন্য নীলনদের রাওজা দ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে দেন। এখানে মামলুকরা সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ধর্মীয় ও আদর্শিক দীক্ষাও গ্রহণ করতেন।
মামলুকদের মধ্যে একে অপরের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। সহপাঠীদের মধ্যে ছিল 'খুশদাশিয়া' বা সাথী সম্পর্ক। আর মনিবদের সাথে ছিল ছাত্র-উস্তাদ সম্পর্ক। মনিবরা তাদের মামলুকদের সাথে গোলামের মতো ব্যবহার করতেন না; বরং উস্তাদের জন্য ছাত্রের সাথে যেমন আচার ব্যবহার করা দরকার, সেভাবেই করতেন।
কুতুজ ও বাইবার্স উভয়েরই ভাষা ছিল তুর্কি। প্রায় কাছাকাছি এলাকার অধিবাসী ছিলেন তারা। কুতুজ ছিলেন রাজ পরিবারের ছেলে। তারা একই সাথে পড়াশোনা করেছেন, সামরিক ট্রেনিং ও আদর্শিক দীক্ষা গ্রহণ করেছেন। স্বভাবতই তাঁদের মধ্যে খুশদাশিয়া বা সহপাঠীদের মধ্যকার বিশেষ সম্পর্কটা ছিল বলে ধারণা করা যায়।
* কর্মজীবন ও ঐতিহাসিক আইন জালুত প্রান্তর
সাইফুদ্দিন কুতুজ সুলতান আইবাকের সর্বাধিক বিশিষ্ট মুয়াজী মামলুক ছিলেন এবং ১২৫৩ সালে তিনি তাঁর প্রধান সহকারী হন। আইবাক ১২৫৭ সালে ইন্তেকাল করলে কুতুজ আইয়বাকের ছেলে আল-মনসুর আলীর সহকারী সুলতান হিসেবে কাজ করেন। কুতুজ মুয়াজি মামলুকদের নেতৃত্বে ছিলেন যারা আইবাকের বিধবা সম্রাজ্ঞী শাজারাতুদ-দুর কে সরিয়ে আল মনসুর আলীকে মিশরের নতুন সুলতান হিসাবে স্থাপন করেছিলেন।
১২৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে, মঙ্গোল সেনাবাহিনী বাগদাদ আক্রমণ করে এবং এর বাসিন্দাদের নির্মম ভাবে গনহত্যা চালায় এবং আব্বাসীয় খলিফা আল-মুস্তাসিম বিল্লাহকে হত্যা করে। বাগদাদর পর হালাকু বাহিনী সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হয় যা আইয়ুবিদের রাজা আন-নাসির ইউসুফ দ্বারা শাসিত হচ্ছিল, যিনি হুলাগুর কাছ থেকে একটি হুমকিমূলক চিঠি পেয়েছিলেন। সিরিয়া থেকে সাহায্য চেয়ে মিশরে একটি চিঠি পৌছালো কায়রোতে, যাতে বর্ণনা রয়েছে সিরিয়া বাসির আর্তনাদের কথা। সিরিয়ার এহেন পরিস্থিতিতে মিশরের আমির, উজির আর সেনা বাহিনীর মনবল প্রায় নিষ্পেষিত। তাই সভাসদদের নিয়ে সাইফুদ্দিন কুতুজ ১৫ বছর বয়সী সুলতান আল-মনসুর আলী কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মিশরে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এমন একজন শক্তিশালী ও যোগ্য সুলতানের প্রস্তাব পেশ করেন। ১২৫৯ সালে আল-মনসুর আলীকে পদচ্যুত করা হয়। কুতুজ যখন নতুন সুলতান হন, তিনি আমিরদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি মঙ্গোলদের পরাজিত করার পরে তারা অন্য যে কোনও সুলতানকে আবার সিংহাসনে বসাতে পারবেন।
বাগদাদ পতন ও শাম বিজয়ের পর তাতারদের সামনে একমাত্র ইসলামি শক্তি হিসেবে বাকি ছিল মিসর। এই মিসর ছিল তাতারদের বিশ্বজয়ের পথে অনেক বড় বাধা। তাই তারা মিসরের দিকে ধেয়ে আসছিল। মিসরের সিংহাসনে তখন অধিষ্ঠিত ছিলেন সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ। তিনি তাতারদের ভয়াবহতা অনুভব করলেন।
মুসলিমবিশ্বে সেসময় সবার বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, তাতাররা অপরাজেয়, তাদেরকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। এমনকি বলা হত, কেউ যদি তোমাকে এসে তাতারদের পরাজয়ের সংবাদ দেয়, তবে তাকে বিশ্বাস করো না! কেননা, তাতারদের পরাজিত হওয়া অসম্ভব!
তাতারদের ভয়ে জনগণের প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত, সেনাবাহিনী ছিল মনোবলহীন। সেনাসংখ্যাও তুলনামূলক কম। কেননা, সালিহ আইয়ুবের সময়কার দুর্ধর্ষ বাহরিয়া মামলুক বাহিনী তো মিসরে নেই, তারা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় বাহরিয়াদের ছাড়া কেবল মুইজ্জিয়দের মাধ্যমে তাতারদের মোকাবেলা করা অসম্ভব। এহেন পরিস্থিতিতে সুলতান কুতুজ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন, যেগুলো ছাড়া তাতারদের মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব ছিল। সেই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যে কোনো মূল্যে বাহরিয়া মামলুকদেরকে ফিরিয়ে আনা।
এই সময়টাতে বাহরিয়া মামলুকরাও খুব বেশি ভালো অবস্থানে ছিল না। তারা কিরকের শাসক কর্তৃক নিগৃহীত হয়েছিল। এমতাবস্থায় আবারও মিসরে ফিরে যাওয়া ছাড়া তাদের গত্যন্তর ছিল না। তাই সুলতান কুতুজ দূত মারফত বাইবার্সকে ডেকে পাঠাতেই বাইবার্স সদলবলে মিসরে গিয়ে হাজির হলেন। সুলতান কুতুজ বইবার্সকে সসম্মানে বরণ করলেন এবং তাঁকে উচ্চ সামরিক পদ প্রদান করলেন।
তাতারদের দূতেরা চিঠি নিয়ে সুলতানের দরবারে উপস্থিত! এক বর্ণনামতে সংখ্যায় তারা ছিল ছয়জন। চিঠিটা ছিল হুমকি-ধমকিতে ভরপুর। রীতিমতো ভীতি সঞ্চারকারী এই চিঠিটা ছিল তাতারদের মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ। এমনিতেই সবাই তাতারদের ভয়ে ছিল ভীত। এখন এই চিঠির কথাগুলো শোনার পর সবার ছাতি যেন শুকিয়ে কাঠ।
সুলতানের পক্ষ থেকে সামরিক বৈঠক আহবান করা হল। এতে দেশের বড় বড় উলামা-ফুকাহা, শাইখুল ইসলাম, প্রধান বিচারপতি-সহ উচ্চ পর্যায়ের সকল সামরিক অফিসার ও আমিরদেরকে দাওয়াত করা হল। কঠিন পরিস্থিতির ব্যাপারে সুলতান তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন।
বড় বড় আমিররা আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিলেন। বলতে গেলে আমির ও সামরিক অফিসারদের কেউই তাতারদের সাথে যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সুলতান ছিলেন যুদ্ধের পক্ষে। তিনি দেখেছিলেন, যেসব শহর তাতারদের কথামতো আত্মসমর্পণ করেছিল, তারাও নিরাপত্তা পায়নি, তাতারদের ধংসাত্মক আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেনি। সুতরাং মরতে যখন হবেই, জিহাদ করেই মরব। আর জিহাদের সকল শর্তপূরণ ও নীতিমালা মেনে তাতারদের মোকাবেলা করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করবেন। এই ছিল সুলতানের দৃষ্টিভঙ্গি।
সুলতানের সাথে আরেকজন আমির একমত ছিলেন। তিনি রুকনুদ্দিন বাইবার্স। বাইবার্সও যুদ্ধের মত পোষণ করলেন এবং যুদ্ধের ঘোষণাস্বরূপ তাতার দূতদেরকে হত্যা করার পরামর্শ দিলেন! যদিও দূতহত্যা ইসলামে হারাম, কিন্তু অনেক বিষয় বিবেচনা করে বাইবার্সের পরামর্শমতো তাতারদের দূতদেরকে হত্যা করা হল এবং জনগণ ও সেনাদের মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে জুয়াইলা ফটকে তাদের কর্তিত মস্তক ঝুলিয়ে রাখা হল।
প্রধান দুই নেতা যুদ্ধের পক্ষে মত দেওয়ার পর অন্যদেরও আর অমত রইল না। যদিও কেউ কেউ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে আপত্তি করার চেষ্টা করেছিল। শেষপর্যন্ত যুদ্ধের পক্ষেই রায় হল। শুরু হল সমর প্রস্তুতি।
ঠিক সেই সময়ে মিশরে মস্ত বড় ইসলামিক স্কলার ছিলেন শেখ ইজ্জউদ্দিন আব্দুস সালাম । তিনি তার বক্তব্যে সুপষ্টভাবে সুলতান কুতুজের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেন এবং জনগণকে দলে দলে কুতুজের বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান করলেন। এদিকে যাত্রা পথে হালাকু খবর পেলেন তাঁর ভাই গ্রেট খান মংকে খান মারা গেছেন। তাই ৬ লক্ষ সৈন্যের প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ নিজের সাথে নিয়ে তিনি মংগোলিয়া ফিরে গেলেন গ্রেট খানের শেষকৃত্যে যোগ দিতে। বাকি প্রায় ১ লাখ তিনি
রেখে গেলেন তাঁর বিশ্বস্ত ও দক্ষ সেনাপতি কিতবুকার অধীনে মিশর আক্রমণের জন্য।
দুর্ধর্ষ মোঙ্গল বাহিনীর মূল শক্তি ছিল তাঁদের ক্ষিপ্রতা এবং দ্রুতগামী ঘোড়াগুলো। এছাড়া ঘোড়ার উপর থেকে তীর ছুড়ে মারার বিশেষ দক্ষতা ছিল তাঁদের যা ইউরোপ ও এশিয়ার সেনাবাহিনীগুলোর ছিলনা। মোঙ্গল ধনুকগুলো ছিল হালকা কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী। হালকা কিন্তু পাল্লা বেশী হওয়ায় ঘোড়ার উপর চড়েও ব্যবহার করা যেত ধনুকগুলো।
মোঙ্গলরাদের আরেকটি স্ট্র্যাটেজি ছিল পর পর অনেকগুলো সারিতে বিন্যস্ত না হয়েই যতটা সম্ভব পাশাপাশি দাড়িয়ে হামলা চালানো যাতে সুযোগ বুঝে শত্রু বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা যায়। সুলতান কুতুজ বুঝতে পারলেন চওড়া প্রান্তরে মোঙ্গলদের মুখোমুখি হওয়া মানে সাক্ষাৎ ধ্বংস ঢেকে আনা। তিনি মোঙ্গলদের আগে যুদ্ধ ক্ষেত্র পছন্দ করার সুযোগই দিতে চাইলেন না বরং নিজেই সৈন্য নিয়ে এগিয়ে গেলেন তাঁদের মোকাবেলা করার জন্য এবং বেছে নিলেন ফিলিস্তিনের তাবারিয়ার আইনজালুত প্রান্তর।
কুতুজ শুরুতেই তার সব সৈন্যদের দিয়ে আক্রমণ করালেন না বরং প্রথমে ছোট একটি দল পাঠিয়ে মোঙ্গলদের প্ররোচিত করলেন আগে হামলা করার। শুধু তাই নয় তিনি জানতেন তাঁর সিরীয় সৈন্যরা আগেও একবার মোঙ্গলদের কাছে হেরে পালিয়ে এসেছে তাই বিপদে পড়লে এরা আবারও পালাবে। যাতে পালাতে না পারে সেজন্য তিনি এদের রাখলেন সবার সামনে। শুরুতে মোঙ্গলদের প্রবল আক্রমণের মুখে কুতুজের সৈন্যদের অবস্থা ছিল টালমাটাল। তখন সুলতান নিজে শিরস্ত্রাণ খুলে উঁচু জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সৈন্যদের সাহস যোগালেন আর নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন সাধারণ সৈন্যদের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। যেহেতু প্রান্তরটি সরু তাই মোঙ্গলরা তাঁদের পুরনো সেই ট্যাক্টিক্স ব্যবহার করতে পারলনা। উপরন্তু সিরীয় সৈন্যদের ভেদকরে কুতুজের ব্যূহের ভেতরে প্রবেশ করার পর তারা মুখোমুখি হল কুতুজের এলিট বাহিনীর। এদিকে সামনের সারির সিরীয় সৈন্যদের জন্য তাঁরা পিছিয়েও আসতে পারছিলনা। সাথে সাথে দুই পাশ থেকে মোঙ্গলদের উপর নেমে আসল তীর বৃষ্টি। এক পর্যায়ে তাঁদের সেনাপতি কিতবুকা মারা যান। তারপরই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে মোঙ্গল সেনাবাহিনী। পালিয়ে যেতে থাকে দিগ্বিদিক বিক্ষিপ্ত মোঙ্গলরা। কুতুজের সৈন্যরা প্রায় ৬০০ কিলোমিটার তাড়িয়ে শেষ হানাদার সৈন্যটিকেও হত্যা করে। এভাবেই মামলুক সৈন্যদের কাছে পরাজয় ঘটে অহংকারী, বর্বর ও জালিম হালাকু বাহিনীর। নিমিষেই চূর্ণ হয়ে যায় তাঁদের আকাশছোঁয়া দম্ভ। আইনজালুতের ঐতিহাসিক প্রান্তর অবসান হয় মোঙ্গলদের পরাজয়ের মাধ্যমে।
* পরলোকগমন
আইন জালুতের বিজয়ের পর কুতুজ কিছু আমিরের হাতে নিহত হন। এরপর রুকনুদ্দীন বাইবার্স নতুন সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় বসেন।
★তথ্যসুত্রঃ
১.উইকিপিডিয়া
২.সানজাক-ই-উসমান
৩.সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ দ্য ব্যাটালিয়ন : ড. আলী মুহাম্মদ আস-সাল্লাবী
Comments
Post a Comment
Comment your reading experience to us.