Skip to main content

"আশুরা"

                              "আশুরা"


ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মুহররম এর দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। এটি ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুসার বিজয়ের স্মরণে আশুরার দিন সাওম বা রোজা পালন করত। তবে শিয়া মত আশুরার পূর্ব ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে।


এই দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করে। তবে একটি ক্ষুদ্র অংশ ততবীর পালন করে থাকে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে এসব অনুষ্ঠান চোখে পড়ার মত। যেমন- পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইন।


‘আশুরা’ শব্দটি আরবি ‘আশারা’ শব্দমূল থেকে নির্গত। অর্থ দশ। শরিয়তের পরিভাষায় মহররমের দশম দিবসকে ‘আশুরা’ বলে অভিহিত করা হয়। হিজরি বর্ষের সূচনা হয় এই মহররম মাসের মাধ্যমে। ‘মহররম’ শব্দের অর্থ পবিত্রতম ও মর্যাদাপূর্ণ। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে এ মাসকে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের চোখে দেখা হতো। এর পবিত্রতা ও মর্যাদার কথা বিবেচনা করেই যুদ্ধপ্রিয় আরবরা এ মাসে সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘মহররম’ বা ‘মর্যাদাপূর্ণ’ বলে। এ মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, হাদিস শরিফে এ মাসকে ‘আল্লাহর মাস’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ মাস সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ ও সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এসব মাসে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার কোরো না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)


হাদিস শরিফে এসেছে, এ চারটি মাস হলো—জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। কাজেই সৃষ্টির সূচনা থেকেই এ মাসটি বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে আসছে। তাইতো আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর ইতিহাসের অসংখ্য কালজয়ী ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী পুণ্যময় এ মাস। কারবালার ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডিও আশুরার দিনে সংঘটিত হওয়ায় পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। রচিত হয়েছে শোকাভিভূত এক নতুন অধ্যায়।


আশুরা দিবসকে কেন্দ্র করে রচিত ও সংকলিত হয়েছে ইতিহাসের নানা তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনাপ্রবাহ। নবী-রাসুলদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আশুরার মর্যাদাবাহী অসংখ্য ঘটনা-উপাখ্যান-বিবরণ ইতিহাসের গ্রন্থগুলোয় খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন 


তবে হাদিস শরিফে আশুরার ইতিহাস সম্পর্কে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবীজি (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আশুরার দিন তোমরা রোজা রাখো কেন? তারা উত্তর দিল, এটি একটি মহান দিন—এ দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। রাসুল (সা.) বলেন, মুসা (আ.)-কে অনুসরণের ব্যাপারে আমরা তাদের চেয়ে বেশি হকদার। এর পর থেকে তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৩৯)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘এটি সেদিন, যেদিন নুহ (আ.)-এর কিশতি ‘জুদি’ পর্বতে স্থির হয়েছিল। তাই নুহ (আ.) আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ সেদিন রোজা রেখেছিলেন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২/৩৫৯)


৬০ হিজরির ১০ মহররম সংঘটিত হয় কারবালার হৃদয়বিদারক, মর্মস্পর্শী, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। সেদিন পাপিষ্ঠরা যে নির্মমতা ও নির্দয়তার পরিচয় দিয়েছে, তা পাথরসম যেকোনো হৃদয়েই সমবেদনা জাগিয়ে তুলবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শাহাদাতের পর হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শার এবং ৩৪টি তরবারির আঘাত ছাড়াও অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল।

Comments

Popular posts from this blog

Sultan Saifuddin Qutuz: Brief introduction.

  Sultan Saifuddin Qutuz: Brief introduction. Saif Ad-Din Qutuz (Arabic: سيف الدين قطز) or Saifuddin Qutuz was the Mamluk Sultan of Egypt.  The full name of Sultan Saifuddin Qutuz is Al-Malek-Muzaffar Saif Ad-Din Qutuz.  Saifuddin Qutuz was also known as Mahmud bin Mamdud.  He was a young Mamluk sultan of Turkish descent.  Sultan Saifuddin Qutuz, one of the most influential personalities in history, decorated the Egyptian lion for only one year.  Sultan Saifuddin Qutuz has made history with his heroism and bravery.  He saved the Islamic world from a catastrophe by wreaking havoc on the irresistible Mongol forces in the wilderness of Ain-Jalut.  Along with Ain-Jalut, he is also remembered.  He created a new episode in the wilderness of Ain-Jalut.  According to historians, if he had not existed, the history of the Muslim Ummah would have been written differently today.  He ruled for only one year and gave birth to a new history. ...

Nawab Sir Khwaja Salimullah

   Tasnimul Hasan: "Nawab Sir Khwaja Salimullah (181-1915)" When the British established their colony in Bengal, they did not leave any conspiracy against the Muslim Bengalis.  The way they developed their own Britain by snatching the wealth of the Muslim Bengalis did not leave out the snatching of their history.  Inspired by the biblical spirit, these Englishmen carried out their economic and intellectual Cold Crusade in Bengal, in which they wanted the Muslim Bengalis to be crushed with Enfield rifles mixed with pork fat, so that they could no longer stand with their heads held high. Like.  They wanted to economically paralyze the Bengal of the golden sultanate that had existed for thousands of years, in which a sound merchant of Bengal could buy the whole of Europe with the money he earned.  But Muslim Bengal has nurtured its pragmatic children in its womb even in its worst times.  One such pragmatic child of Muslim Bengal was Nawab Sir Khwaja Salim...