Tasnimul Hasan:
"সুলতান বাইবার্স ০২"
The Father of Conquest
সময়টা ১৭ই অক্টোবর,১২৪৪ খৃষ্টাব্দ। লোকেশান গাজার হিরিবিয়া,ফালাস্তিন। বলছি হিরিবিয়ার যুদ্ধের কথা যাকে ক্রূসেডের ইতিহাসে Battle of La Forbie নামে সবাই চিনে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এবং মামলুকদের ইতিহাসে এই যুদ্ধটির ইতিহাস জানা আমাদের জন্যে খুবই গুরত্বের। কারণ ইতিহাসবিদরা বলে থাকে এই যুদ্ধটিই ৭ম ক্রূসেডের সূচনা করে। এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয় আজকের ফালাস্তিনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হিরিবিয়া নামক একটি এলাকার কাছাকাছি তাই একে বলা হয় হিরিবিয়ার যুদ্ধ।
এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় আইয়্যুবি সালতানাত ও ক্রূসেডারদের মাঝে। আইয়্যুবিদের পক্ষে ছিলো মিশরের মামলুক বাহিনী ও খাওয়ারিজমের মার্সেনারি সৈনিকগণ। আইয়্যুবিদের নেতৃত্বে ছিলেন সুলতান আস-সালেহ আল-আইয়্যুবি।
ক্রূসেডারদের পক্ষে ছিল কিংডম অফ জেরুসালেম ও কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী আইয়্যুবি নেতা।১২৪৪ সালের আগস্ট মাসে সুলতানের বাহিনী জেরুসালেম দখল করে নিলে হোমস এর বিচ্ছিন্নতাবাদী আমীর আল-মানসুর টেম্পলার, হসপিটালার ও টিউটনিক নাইটস এবং অর্ডার অফ দ্যা সেইন্ট লাযারুসের পক্ষে যোগদান করে।
ফালাস্তিনের পূর্বোক্ত লোকেশানে দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধে ক্রূসেডারদের নেতৃত্বে ছিল ৪র্থ ওয়াল্টার অফ ব্রাইয়েনি, কাউন্ট অফ জাফফা অ্যান্ড আসকালান, রবার্ট অফ ন্যানটেস, প্যাট্রিয়ার্ক ওফ জেরুসালেম ১ম ফিলিপ অফ মন্টফোর্ট, কন্সটেবল অফ জেরুসালেম প্রমুখ।এ যুদ্ধে ক্রূসেডার বাহিনীর শক্তি বেশী ছিল। আর মুসলিম বাহিনীর শক্তি অপেক্ষাকৃত ভাবে কিছুটা কম ছিল। কারণ ক্রূসেডাররা এমনেতেই শক্তিশালী উপর দিয়ে আবার আইয়্যুবী একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী আমীর তার সাথে যোগদান করেছে। তাই অনুপাত করলে ক্রূসেডার বাহিনীর শক্তি এ যুদ্ধে আইয়্যুবিদের থেকে বেশী ছিল। কিন্তু তারপরেও ফলাফল কি হয়েছিল তা জানতে আপনাকে পুরো আর্টিকেলটা পড়তে হবে।
আইয়্যুবিদের মামলুক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন একজন কমান্ডার। উচ্চতায় তিনি অন্যদের থেকে একটু লম্বা, একটি চোখ হালকা নীলাভ, বলিষ্ঠ দেহের গড়ন, চুলগুলো কালো ও লম্বা। লোকে তাকে চিনে বাইবার্স নামে।
তখনও বাইবার্স সুলতান হননি। তখন তিনি মিশরের মামলুক বাহিনীর একজন কমান্ডার।যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে ওয়ার কাউন্সিলের পরামর্শ সভায় আমীর মানসুর বললো যে তারা-খাওরিজমের মার্সেনারী বাহিনীর উপর হামলে পড়ে আস-সালেহর বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দিবে। এ যুদ্ধের মূল নেতৃত্ব ছিল ওয়াল্টারের হাতে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী পজিশন নেওয়া হলো। রাইট উইং এ দাড় করানো হলো ক্রূসেডার বাহিনীকে যা উপকূলের নিকটেই ছিলো। হোমসের আমীর মানসুর মাঝখানে আর বিচ্ছিন্নতাবাদী বেদুঈনরা একেবারে লেফট উইং এ।
যুদ্ধ শুরু:
১৭ই অক্টোবর ভোরবেলায় যুদ্ধ শুরু হয়। ক্রূসেডার নাইটরা সর্বপ্রথমে মামলুকদের উপর আঘাত হানে। তবে সে আঘাত ১৮ই অক্টোবর ভোর পর্যন্ত মামলুক বাহিনী ধরে রেখেছিল। কমান্ডার বাইবার্স খাওয়ারিজম বাহিনীকে সেন্টারে আমীর মানসুরের উপর আঘাত হানতে নির্দেশ দিলো।
খাওয়ারিজম বাহিনীর আক্রমণে আমীর মানসুরের সেন্টার ফোর্স ফালাফালা হয়ে যায়।এরপরেই খাওয়ারিজমের মার্সেনারী বাহিনী লেফট উইং এ থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী বেদুঈনদের কচুকাটা করার জন্য অগ্রসর হয়। আর এদিক দিয়ে আমীর আল-মানসুরের বাহিনীর অবস্থা হয়ে পড়েছিল খুবই শোচনীয়। পরিশেষে সে আর টিকতে না পেরে ২৮০ জন সার্ভাইভার নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়।
এবার এগিয়ে আসলো ক্রূসেডার বাহিনী যারা ছিল টেম্পলার নাইট, হসপিটালার নাইট, টিউটনিক নাইট যাদের হাতে লেগেছিল ফালাস্তিনের নারী ও শিশুদের পবিত্র রক্ত। কিংবা যাদের কাম-ক্রোধ থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট ফালাস্তিনি মেয়েটিও। যাদের সাম্রাজ্যবাদী নোংরা চেতনা থেকে রক্ষা পায়নি অর্থোডক্স খৃষ্টান জনসাধারণ। ক্রূসেডারেরা মামলুকদের উপর চার্জ শানালে প্রাথমিকভাবে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল ক্রূসেডারদের। কিন্তু স্বাভাবিকতা নিতান্তই অস্বাভাবিকতায় পরিণত হলো যখন সামনে থেকে মামলুক ফোর্স ও পেছন থেকে খাওয়ারিজমিয়ান মার্সেনারী ফোর্স কচুকাটা শুরু করলো। মাত্র কয়েক ঘন্টা পা থেকে মাথা পর্যন্ত লোহায় ঢাকা নাইটরা মামলুক ও খাওয়ারিজমিয়ানদের বিরুদ্ধে টিকতে পারলো।
"সেদিন মামলুক ও খাওয়ারিজমিয়ান মার্সেনারী বাহিনীর মধ্যে যে দেশপ্রেম ফুটে উঠেছিল, যে মানব-প্রেম ফুটে উঠেছিল, ফুটে উঠেছিল যে সম্প্রীতির বন্ধন। কে মিশরি? কে তুর্কি? কে কুর্দি? কে আরবী? এই প্রশ্নের উর্ধে গিয়ে যেদিন তারা একত্ববাদীতার প্রভাবে এক হয়ে, হয়ে উঠেছিল এক অপরাজেয় প্রতিরোধ সেদিন ত্রীত্ববাদী সাম্রাজ্যবাদীদের পড়নে লৌহবর্মও সে উষ্ণতার কাছে গলে গিয়েছিল"
পাচ হাজারেরও বেশীসংখ্যক ক্রূসেডার বাহিনীকে উত্তপ্ত দামেস্কি লোহার স্বাদ আস্বাদন করালো দেশপ্রেমিক মামলুক ও খাওয়ারিজমের মার্সেনারী বাহিনী। ৮০০ লোককে বন্দী করা হলো। স্বয়ং ক্রূসেডার নেতা ওয়াল্টারকেও গ্রেফতার করা হলো। আরও বন্দীদের নাম নীচে দেওয়া হলো, এরা এসেছিল ফালাস্তিন দখল করতে। কিন্তু ইসলামী আদর্শে গড়ে ওঠা দুটি বাহিনীর কাছে এরা জুতামারা পরাজয়বরণ করে।-
১] ওয়াল্টার অফ ব্রাইয়েনি
২] উইলিয়াম অফ শ্যাস্টেলনাফ
৩] ম্যাস্টার অ দ্যা হসপিটাল
৪] দ্যা কন্সট্যাবল অফ ত্রিপলি
৫] নাইট সৈন্য- শুধু মাত্র ৩৩ টেম্পলার, ২৭ হসপিটালার আর ৩জন সংখ্যক টিউটনিক নাইট (বাকি সব উপরে উঠে গিয়েছে )।
৬] ফিলিপ অফ মন্টফোর্ট
৭] প্যাট্রিয়ার্ক অফ জেরুসালেম
৮] রবার্ট অফ ন্যান্টেস পালিয়ে আসকালান চলে গিয়েছিল
৯] আরমান্ড ডে প্যারিগর্ড
১০] মাস্টার অফ দ্যা টেম্পল
১১] আর্চবিশপ অফ টায়রি
১২] লোদ আর রামালার বিশপ
১৩] জন ও উইলিয়াম
১৪] টেম্পল মার্শাল
১৫] বোহেমন্ডের ছেলেরা
১৬] লর্ড অফ বোট্রন
প্রশ্নঃ কি করা হয়েছিল এই হানাদারদের ?
উত্তরঃ- মৃত্যুদন্ড
তথ্যসহায়িকা-
১] Barber, Malcolm (2012). The New Knighthood (10th ed.). Cambridge University Press.
২] Robert Payne (1985). The Dream and the Tomb. Stein and Day/Publishers.
৩] Joseph Drory (September 2003). "Al-Nasir Dawud: A Much Frustrated Ayyubid Prince". Al-Masaq. 15 (2): 161–187
Comments
Post a Comment
Comment your reading experience to us.