Skip to main content

আবু জর গিফারী রাঃ এর ওফাত।

 Tasnimul Hasan:

মরুর বুকে আবু জর গিফারী রাঃ এর ওফাত।


হযরত আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু’র ওফাতঃ


৩২
হিজরী। আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এঁর ওফাতের  সময় উপস্থিত হয়েছে। নির্জন মরুভূমিতে তিনি আর তাঁর স্ত্রী একা। রাবাতাহ  ছিলো এমন একটি যায়গা যেখান দিয়ে সাধারণত একেবারেই লোক চলাচল হতো না, তার উপর সে সময়টা এমন ছিলো যখন কোন বাণিজ্য কাফেলাও যাতায়াত করতো না।। মৃত্যুপথযাত্রী আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এঁর অবস্থা দেখে তাঁর স্ত্রী ব্যাকুল হয়ে পড়লেন কোনো সাহায্যের আশায়। স্ত্রীর এ অবস্থা দেখে আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বললেন;

:চিন্তা করো না, আমি রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিঁনি বলেছেন; তোমাদের মধ্যে এখানকার একজনের মৃত্যু হবে নির্জন মরুভূমিতে। কিন্তু তার মৃত্যুর সময় মুমিনদের একটি দল সেখানে উপস্থিত হবে। আমি নিশ্চিত সে ব্যক্তিটিই আমি, কারণ সেদিন আমরা যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাম তাদের সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেবল আমিই বাকী। তুমি পথের দিকে খেয়াল রাখ। নিশ্চয়-ই আল্লাহর রাসূল মিথ্যা বলেন নি।” 

আবু জর  গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এঁর  স্ত্রী একবার স্বামীর কাছে আরেকবার উঁচু টিলার উপর উঠে দূরে খেয়াল করতে লাগলেন। এ অসময়ে কে আসবে এই অপ্রচলিত পথে এই চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। অবশেষে দূরে দেখা গেল ধুলোর ঝড় তুলে একদল লোক এদিকেই আসছে। 

কাফেলাটি এসে আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-কে  অসহায় অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন;

:এ লোকটি কে? ”

তাঁর স্ত্রী উত্তর করলেন;

:ইনি  আবু জর।”

 লোকেরা বললেন;

:রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-এঁর সাহাবী আবু জর?”

তাঁর স্ত্রী বললেন;

 :হ্যাঁ।” 

লোকেরা অত্যন্ত অস্থির হয়ে বললেন;

:আমাদের জান কুরবান হোক”। 

তাঁরা দ্রুত আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করলেন। প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ্ ইবনে  মাসউদ গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু  তাঁর জানাজার সালাত পড়ান।

এমনিভাবে আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন দুনিয়াবিমুখ হয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ  আর তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-এঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। 

একদিন যে লোকটি ওয়াদান (তাঁর জন্মস্থান) ভ্যালীর আতঙ্ক আর ত্রাসের নাম ছিলো, সে ব্যক্তিটিই একদিন নির্লোভ আর দুনিয়াবিমুখতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। 

ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহ  সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাঁর অন্তরকে এমনই পরিবর্তন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-কে তিঁনি এতই ভালবাসতেন যে তাঁর  ওফাতের  পর যখনই তিঁনি রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-এঁর কথা মনে করতেন, তখনই অঝোর ধারায় কাঁদতেন। 

অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যপার এই যে,  এই দুর্ধর্ষ মানুষটি সম্পর্কে-ই রাসূলুল্লাহ   ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, 

”আকাশের নীচে এবং পৃথিবীর উপর আবু জরের চেয়ে বিশ্বাসী ও সত্যবাদী আর কেউ নেই”।

আহ! একেই বলে,আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-এঁর প্রতি ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা কেউ যদি বাসতে  পারে তাহলে দুনিয়ার সম্পদকে লাত্থি দিয়ে আখেরাতে চিরস্থায়ী সম্পদ অর্জন করা তাঁর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

আয় রাব্বে কারীম, আবু জর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু’র দরজাকে কোটি কোটি গুনে বুলন্দ করে দাও। এবং তিঁনি যেভাবে তোমাকে ও তোমার রাসূল  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আ’লিহি ওয়াছাল্লাম-কে ভালোবেসেছেন,সে ভালোবাসার ফল্গুধারা আমাদের অন্তরে প্রবাহিত করে দাও।


আমিন

Comments

Popular posts from this blog

Sultan Saifuddin Qutuz: Brief introduction.

  Sultan Saifuddin Qutuz: Brief introduction. Saif Ad-Din Qutuz (Arabic: سيف الدين قطز) or Saifuddin Qutuz was the Mamluk Sultan of Egypt.  The full name of Sultan Saifuddin Qutuz is Al-Malek-Muzaffar Saif Ad-Din Qutuz.  Saifuddin Qutuz was also known as Mahmud bin Mamdud.  He was a young Mamluk sultan of Turkish descent.  Sultan Saifuddin Qutuz, one of the most influential personalities in history, decorated the Egyptian lion for only one year.  Sultan Saifuddin Qutuz has made history with his heroism and bravery.  He saved the Islamic world from a catastrophe by wreaking havoc on the irresistible Mongol forces in the wilderness of Ain-Jalut.  Along with Ain-Jalut, he is also remembered.  He created a new episode in the wilderness of Ain-Jalut.  According to historians, if he had not existed, the history of the Muslim Ummah would have been written differently today.  He ruled for only one year and gave birth to a new history.   * Birth and childhood Sultan Saifuddin Kutuz on November

মুহাম্মাদ (ﷺ) এর এক আদরের বিড়াল 'মুয়েজ্জা'

Tasnimul Hasan, [15.08.21 11:09]  'মুয়েজ্জা' . একদিন তার পবিত্র পরিচ্ছদের একাংশে বিড়ালটা পরম ভালোবেসে ঘুমিয়েছিলো। মুহাম্মদ ﷺ তাকে টেনে তোলেননি, পোশাক ঝাড়া দেননি, লাথি মেরে দূর দূর করে তাড়িয়েও দেননি। ঘুম ভেঙে যেতে পারে ভেবে, পাছে বিড়ালটির কষ্ট হয় — তাই গায়ে হাত বুলিয়ে ডাকও দেননি। তিনি যা করেছেন, তা কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা — বাস্তবে করাতো অনেক দূরের ব্যাপার.. .মুহাম্মদ ﷺ আলতো করে ঘুমন্ত বিড়ালটার সমপরিমাণ জায়গা রেখে — বাকি কাপড়টুকু কেটে ফেলেছিলেন। ছেড়া পোশাকটি গায়ে চড়িয়ে দিব্যি নামাজে রওনা দিলেন। .একদিন এক প্রসিদ্ধ সাহাবী বিড়াল ছানা কোলে নিয়ে খেলছেন। তিনি নতুন না, বেশ কবার বিড়াল কোলে নিয়ে আদর করতে করতে মসজিদে আসতেন। নবী মুহাম্মদ ﷺ এর কাছে ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করতেন। কোলে বিড়ালকে আদর করতে থাকা অবস্থায় মুহাম্মদ ﷺ তাকে কাছে ডাকলেন। এই বিড়ালের বাপ এদিকে আসো। ভদ্রলোকের ভ্রু কুঁচকে যায়নি, সরল বোকা মানুষের মতো মুচকি হাসলেন । প্রিয় শিক্ষকের এই ডাকটা তার মনে ধরেছে খুব। সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের নামটাই বদলে ফেলবেন। নবীর ভালোবাসার নিদর্শনের দরুন আমরা সবাই তাকে বিড়ালের বাপ বলেই ডাকি। সহীহ হাদিসের স

জান্নাতি ফোয়ারা "জমজম" এর যত বিস্ময়।

Tasnimul Hasan: জান্নাতি ফোয়ারা "জমজম" এর যত বিস্ময়।